কম্পিউটার বিজ্ঞান: সবকিছুর মূল শিকড়
Last updated
Last updated
আপনারা কি জানেন, আমাদের চারপাশে থাকা সব আধুনিক প্রযুক্তির ভিত্তি একটাই? সেটা হলো কম্পিউটার বিজ্ঞান (Computer Science)। কম্পিউটার বিজ্ঞান সম্পর্কে কোনো ধারণা না থাকলে, আমার "কম্পিউটার সায়েন্স ইঞ্জিনিয়ারিং (CSE) কোর্স (নন-সিএসই শিক্ষার্থীদের জন্য)" একটু দেখে নিন।
কম্পিউটার বিজ্ঞান এমন একটি জ্ঞানচর্চার ক্ষেত্র যেখানে আমরা কম্পিউটারের কার্যপ্রক্রিয়া বুঝি এবং কিভাবে তাকে বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করতে শেখানো যায় তা শিখি। আপনার মোবাইল ফোনের অ্যাপ, গুগলের সার্চ ইঞ্জিন, এমনকি ভয়েস অ্যাসিস্ট্যান্ট, সবকিছুই কম্পিউটার বিজ্ঞানের ফল।
কম্পিউটার বিজ্ঞানের কাজ তিনটি স্তম্ভের উপর দাঁড়িয়ে:
ডেটা প্রসেসিং: কম্পিউটারের মাধ্যমে ডেটা সংগ্রহ, সংরক্ষণ এবং বিশ্লেষণ।
সমস্যা সমাধান: একটি সমস্যা কীভাবে সমাধান করা যায় তার জন্য অ্যালগরিদম তৈরি।
প্রোগ্রামিং ভাষা: কম্পিউটারকে নির্দেশনা দেওয়ার জন্য কোড লেখা।
এই বিজ্ঞানই আমাদের ডেটার বিশাল সমুদ্রে নিয়ে যায়, যেখানে ডেটা বিজ্ঞান (Data Science) জন্ম নেয়।
কম্পিউটার বিজ্ঞান থেকে শুরু করে জেনারেটিভ এআই পর্যন্ত পুরো পথটি আমরা একটি মানচিত্রের মতো কল্পনা করতে পারি:
কম্পিউটার বিজ্ঞান (Computer Science): শিকড়, যা প্রোগ্রামিং, অ্যালগরিদম এবং ডেটার সাথে কাজ করে।
ডেটা (Data): কম্পিউটারে সংরক্ষিত তথ্য, যা যেকোনো প্রযুক্তির ভিত্তি।
ডেটা বিজ্ঞান (Data Science): ডেটা থেকে জ্ঞান এবং অন্তর্দৃষ্টি পাওয়ার বিজ্ঞান।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (Artificial Intelligence): ডেটা এবং ডেটা বিজ্ঞানের উপর ভিত্তি করে তৈরি এমন এক প্রযুক্তি যা মানুষের মতো চিন্তা করতে পারে।
মেশিন লার্নিং (Machine Learning): কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার একটি শাখা, যেখানে মেশিন নিজেই শেখে।
ডিপ লার্নিং (Deep Learning): মেশিন লার্নিং-এর আরও উন্নত রূপ, যা জটিল প্যাটার্ন চিনতে পারে।
জেনারেটিভ এআই (Generative AI): ডিপ লার্নিং-এর উপর ভিত্তি করে এমন প্রযুক্তি যা নতুন কিছু তৈরি করতে পারে।
ডেটা হলো কম্পিউটার বিজ্ঞানের প্রথম স্তম্ভ। এটি এমন একটি উপাদান যা আমরা প্রতিনিয়ত তৈরি করি এবং ব্যবহার করি। এটি হতে পারে একটি সাধারণ সংখ্যা, একটি নাম, বা একটি পূর্ণাঙ্গ ডেটাসেট। ডেটা ছাড়া কোনো প্রক্রিয়া শুরু করা সম্ভব নয়।
ডেটার গুরুত্ব বুঝতে একটি উদাহরণ দিই: আপনি যখন আপনার মোবাইলে ছবি তোলেন, সেই ছবিগুলো ডেটা হিসেবে সংরক্ষণ হয়। এরপর সেই ছবি ব্যবহার করে ফেস রিকগনিশন বা ইমেজ প্রসেসিং-এর মতো কাজ করা হয়।
ডেটা বিজ্ঞান (Data Science) ঠিক এখানেই আসে।
ডেটা বিজ্ঞান ডেটা বিশ্লেষণ করার এবং এর থেকে অন্তর্দৃষ্টি পাওয়ার একটি পদ্ধতি। ধরেন, আমরা একটি বড় ডেটাসেট থেকে জানতে চাই, কোন অঞ্চলে মানুষ বেশি ফাস্টফুড খায়। ডেটা বিজ্ঞান ব্যবহার করে আমরা এই বিশ্লেষণ করতে পারি।
ডেটা বিজ্ঞান আমাদের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) তৈরিতে সাহায্য করে। এটি AI-কে ডেটা থেকে শেখাতে এবং নতুন সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) হলো কম্পিউটার বিজ্ঞানের এমন একটি শাখা যা মানুষের মতো চিন্তা করতে পারে। ডেটা বিজ্ঞান AI-এর ভিত্তি তৈরি করে। AI মডেলগুলো ডেটা থেকে শেখে এবং তারপর সেগুলো ব্যবহার করে জটিল সমস্যার সমাধান করে।
উদাহরণস্বরূপ: AI চ্যাটবট, যেমন ChatGPT, ডেটার উপর ভিত্তি করে মানুষের মতো উত্তর দেয়। এটি ডেটা বিজ্ঞান এবং মেশিন লার্নিং-এর সম্মিলিত প্রয়োগ।
মেশিন লার্নিং হলো AI-এর একটি শাখা, যেখানে মেশিন নিজেই শেখে। এটি তিন ধরনের হতে পারে:
সুপারভাইজড লার্নিং (Supervised Learning): যেখানে ডেটার সাথে লেবেল দেওয়া থাকে।
আনসুপারভাইজড লার্নিং (Unsupervised Learning): যেখানে কোনো লেবেল ছাড়াই প্যাটার্ন খোঁজা হয়।
রিইনফোর্সমেন্ট লার্নিং (Reinforcement Learning): যেখানে মেশিন পুরস্কার এবং শাস্তি থেকে শেখে।
ডিপ লার্নিং হলো মেশিন লার্নিং-এর আরও গভীর এবং জটিল স্তর। এটি নিউরাল নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে, যা মানুষের মস্তিষ্কের মতো কাজ করে। ডিপ লার্নিং আমাদের এমন কিছু প্রযুক্তি দেয়, যা নতুন কিছু তৈরি করতে পারে।
জেনারেটিভ এআই হলো ডিপ লার্নিং-এর সর্বোচ্চ প্রয়োগ। এটি এমন কিছু তৈরি করতে পারে যা আগে কখনো ছিল না। উদাহরণস্বরূপ:
একটি নতুন ছবি আঁকা
মানুষের মতো কথোপকথন চালানো
নতুন সঙ্গীত বা গল্প তৈরি করা
এই পুরো যাত্রা কম্পিউটার বিজ্ঞানের শিকড় থেকে শুরু হয়ে জেনারেটিভ এআই-এর শিখরে পৌঁছেছে। প্রতিটি স্তর একে অপরের সাথে যুক্ত এবং একত্রে আমাদের আধুনিক প্রযুক্তির ভিত্তি তৈরি করেছে।
আপনারা কি প্রস্তুত, এই যাত্রার প্রতিটি ধাপকে বিস্তারিতভাবে জানার জন্য? তাহলে চলুন, আমরা প্রতিটি অধ্যায় আলাদাভাবে শিখতে শুরু করি।