Agentic AI: স্বাধীন লক্ষ্য নির্ধারণে এআই-এর এক নতুন ধাপ
Last updated
Last updated
প্রম্প্ট ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে আলোচনা করার পর আমরা বুঝেছি, বর্তমান AI-এর কাজ অনেকটাই মানুষের নির্দেশনার উপর নির্ভরশীল। কিন্তু ভাবুন তো, যদি এমন একটি AI তৈরি করা যায়, যেটি মানুষের সাহায্য ছাড়াই নিজে নিজে কাজের লক্ষ্য নির্ধারণ করতে পারে? এটাই হলো Agentic AI, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার এক উন্নত স্তর, যেখানে AI নিজেই সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম।
Agentic AI হলো এআই-এর এমন একটি ধরণ, যা মানুষের প্রম্প্ট বা নির্দেশনার উপর পুরোপুরি নির্ভরশীল নয়। এটি স্বাধীনভাবে চিন্তা করতে পারে এবং কাজ করার জন্য নিজস্ব লক্ষ্য নির্ধারণ করতে পারে।
উদাহরণ: ধরা যাক, আপনি একটি চ্যাটবট তৈরি করেছেন, যা কেবল ব্যবহারকারীর প্রশ্নের উত্তর দেয়। এটি বর্তমান AI বা Narrow AI-এর একটি উদাহরণ। কিন্তু Agentic AI এমন হবে, যেখানে সেই চ্যাটবট নিজে থেকে ব্যবহারকারীর সমস্যাগুলো বুঝে সমাধানের জন্য সঠিক পদক্ষেপ নেবে।
এজেন্টিক এআই সাধারণত চারটি ধাপে কাজ করে:
উপলব্ধি (Perceive): বিভিন্ন উৎস থেকে ডেটা সংগ্রহ ও প্রক্রিয়াকরণ করা, যেমন সেন্সর, ডেটাবেস বা ডিজিটাল ইন্টারফেস।
যুক্তি করা (Reason): বড় ভাষা মডেল ব্যবহার করে কাজ বোঝা, সমাধান তৈরি করা এবং নির্দিষ্ট মডেলগুলোর সমন্বয় করা।
কর্ম সম্পাদন (Act): বাহ্যিক টুল ও সফটওয়্যারের সাথে ইন্টিগ্রেশন করে পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ সম্পন্ন করা।
শেখা (Learn): নিজের কাজের ফলাফল থেকে শিক্ষা নিয়ে ক্রমাগত উন্নতি করা, যা ভবিষ্যতে আরও কার্যকর সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা করে।
এজেন্টিক এআই-এর ব্যবহারিক ক্ষেত্রগুলো বিস্তৃত, যেমন:
গ্রাহক সেবা: স্বয়ংক্রিয়ভাবে সাধারণ প্রশ্নের উত্তর দেওয়া ও রুটিন যোগাযোগ পরিচালনা করা, যা গ্রাহক সন্তুষ্টি বাড়ায়।
কন্টেন্ট তৈরি: দ্রুত ও ব্যক্তিগতকৃত মার্কেটিং কন্টেন্ট তৈরি করা, যা ব্যবসার প্রতিযোগিতামূলক অবস্থানকে শক্তিশালী করে।
সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং: পুনরাবৃত্তিমূলক কোডিং কাজ স্বয়ংক্রিয় করা, যা ডেভেলপারদের জটিল সমস্যার সমাধানে মনোযোগ দিতে সহায়তা করে।
স্বাস্থ্যসেবা: ডাক্তারদের প্রশাসনিক কাজ কমিয়ে রোগীদের সাথে আরও সময় ব্যয় করতে সহায়তা করা, এবং রোগীদের ২৪/৭ সেবা প্রদান করা।
Agentic AI-কে আরও ভালোভাবে বোঝার জন্য এর কিছু গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য দেখা যাক:
স্বাধীন লক্ষ্য নির্ধারণ (Independent Goal Setting): Agentic AI নির্ধারণ করতে পারে, কোন কাজটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং কীভাবে এটি সম্পন্ন করা যায়।
স্ব-শিক্ষা (Self-learning): এটি পরিবেশ থেকে শিখে নিজেকে উন্নত করতে পারে, যা প্রম্পট ইঞ্জিনিয়ারিং ছাড়াই দক্ষ।
পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত গ্রহণ (Context-aware Decision Making): Agentic AI নির্ধারণ করতে পারে কোন পরিস্থিতিতে কোন কাজটি জরুরি।
বহুমুখী দক্ষতা (Multitasking Ability): এটি একই সাথে একাধিক কাজ সম্পন্ন করতে পারে, যেমন ডেটা বিশ্লেষণ, ব্যবহারকারীর প্রয়োজনীয়তা বোঝা এবং সমাধান প্রদান।
Agentic AI প্রযুক্তির প্রয়োজন ক্রমশ বাড়ছে, কারণ:
এটি স্বায়ত্তশাসিত সিস্টেম তৈরি করতে সাহায্য করে।
জটিল সমস্যার সমাধানে মানুষকে কম হস্তক্ষেপ করতে হয়।
বিভিন্ন ক্ষেত্রে, যেমন স্বয়ংক্রিয় গাড়ি, রোবটিক্স এবং গবেষণায়, এটি বড় ভূমিকা রাখতে পারে।
বিষয়
Generative AI
Agentic AI
কাজের ধরণ
মানুষের প্রম্পটের উপর নির্ভরশীল।
নিজে থেকে লক্ষ্য নির্ধারণ করে কাজ করে।
নির্ভরশীলতা
প্রম্পট ছাড়া কাজ করতে পারে না।
মানুষের নির্দেশনার প্রয়োজন নেই।
পরিবর্তনশীলতা
নির্ধারিত কাজের বাইরে মানিয়ে নেওয়া কঠিন।
নতুন পরিস্থিতি এবং চ্যালেঞ্জের সাথে মানিয়ে নিতে সক্ষম।
Agentic AI-এর সম্ভাবনা যতই বড় হোক, এটি নিয়ে কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে:
নৈতিকতা: AI যদি নিজের সিদ্ধান্ত নিজে নিতে শুরু করে, তবে এটি মানুষের উপর প্রভাব ফেলতে পারে।
নিয়ন্ত্রণের প্রশ্ন: Agentic AI-কে সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে এটি বিপজ্জনক হতে পারে।
প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতা: এমন AI তৈরি করতে বড় ডেটাসেট এবং জটিল অ্যালগরিদমের প্রয়োজন, যা বর্তমান প্রযুক্তিতে সীমিত।
এজেন্টিক এআই কৃত্রিম সাধারণ বুদ্ধিমত্তা (Artificial General Intelligence - AGI) এর দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এটি আমাদেরকে এমন একটি সময়ের দিকে নিয়ে যাচ্ছে, যেখানে এআই সিস্টেমগুলো মানুষের মতো চিন্তা ও কাজ করতে পারবে, যা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ও শিল্পক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটাবে।
পরবর্তী অধ্যায়ে আমরা AGI সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো এবং এটি কীভাবে প্রযুক্তির ভবিষ্যৎ বদলে দিতে পারে তা অন্বেষণ করবো।