প্রম্পট ইঞ্জিনিয়ারিং এর ভবিষ্যৎ

ওপেনএআই এর প্রতিষ্ঠাতা স্যাম অল্টম্যানের মতে, পাঁচ বছরের মধ্যে আমরা হয়তো আর প্রম্পট ইঞ্জিনিয়ারিং এর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করব না। তাঁর লক্ষ্য, এমন এক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (Artificial General Intelligence) তৈরি করা যা যেকোনো কাজে মানুষের সমকক্ষ হবে। যখন আমরা এই পর্যায়ে পৌঁছাব, তখন স্বাভাবিক ভাষায় কম্পিউটারকে যা খুশি তাই করতে বলতে পারব। কিন্তু, আমার বিশ্বাস, প্রম্পট ইঞ্জিনিয়ারিং এর গুরুত্ব তখনো থাকবে।

প্রম্পট ইঞ্জিনিয়ারিং এর প্রয়োগ

আমরা প্রতিনিয়ত প্রম্পট ইঞ্জিনিয়ারিং এর অনুশীলন করছি। যখন আপনি আপনার ডিজাইনারকে কোনো কাজের ব্রিফ দেন, এক্সেলে কিছু করার পদ্ধতি ইন্টার্নকে বুঝিয়ে দেন, ম্যানেজারকে প্রেজেন্টেশন দেন - এগুলো সবই এক ধরনের প্রম্পট। এমনকি আপনার চাকরির চুক্তিপত্রও এক ধরনের প্রম্পট, যা আপনার আচরণকে প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্যের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ করে তোলে। প্রম্পট ইঞ্জিনিয়ারিং এর তাত্ত্বিক সংজ্ঞা সম্পর্কে জানতে আমার আগের প্রবন্ধটি দেখতে পারেন।

প্রম্পট ইঞ্জিনিয়ারিং এর মূলনীতি

এআই মডেল যত উন্নত হচ্ছে, প্রম্পট ইঞ্জিনিয়ারিং এর কিছু মৌলিক নীতি স্পষ্ট হয়ে উঠছে। মানুষ এবং এআই, উভয়ের সাথেই এই নীতিগুলো কার্যকর, কারণ এআই মডেলগুলো মানুষের মতো বুদ্ধিমত্তার কাছাকাছি পৌঁছানোর সাথে সাথে মানুষের জন্য কার্যকর কৌশলগুলো এআই এর ক্ষেত্রেও কাজ করবে। চলুন, এই নীতিগুলোর দিকে একটু নজর দেওয়া যাক:

১. নির্দেশনা প্রদান: আপনি এআই থেকে কী ধরনের আউটপুট চান তা স্পষ্টভাবে জানান।

২. পছন্দসই ফর্ম্যাট উল্লেখ: আউটপুটের কাঠামো, শব্দের সংখ্যা, সুর ইত্যাদি বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করুন।

৩. উদাহরণ প্রদান: কাজটি সঠিকভাবে সম্পন্ন করার জন্য এআই কে কিছু উদাহরণ দিন।

৪. গুণমান মূল্যায়ন: এআই এর উত্তর মূল্যায়ন করুন, ত্রুটি শনাক্ত করুন, এবং উন্নতির জন্য প্রতিক্রিয়া দিন।

৫. কাজকে ভাগ করুন: জটিল কাজগুলোকে ছোট ছোট ধাপে ভাগ করে এআই কে দিন।

প্রম্পট ইঞ্জিনিয়ারিং-এর ৫টি কৌশল: কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে আরও কার্যকরী করে তোলা

১. এন-শট প্রম্পটিং (N-Shot Prompting):

এই কৌশলে খুব কম বা একেবারেই লেবেলবিহীন ডেটা দিয়ে মডেলকে কাজের জন্য প্রস্তুত করা হয়। কিছু উদাহরণ দেখিয়ে মডেলকে শেখানো হয়। ধরুন, আপনি কাস্টমার রিভিউর ভালো-মন্দ বিচার করতে চান। এন-শট প্রম্পটিং-এর মাধ্যমে আপনি মডেলকে কিছু লেবেলযুক্ত উদাহরণ দেখাবেন (যেমন, "ভালো" বা "খারাপ")। এরপর মডেল অন্য রিভিউগুলোকেও লেবেল করতে শিখবে।

২. জিরো-শট প্রম্পটিং (Zero-Shot Prompting):

এই কৌশলে কোনো উদাহরণ ছাড়াই কাজের নির্দেশনা দেওয়া হয়। যেমন, আপনি এআইকে বললেন, "এই ইংরেজি বাক্যটাকে ফরাসি ভাষায় অনুবাদ করো: 'Hello, how are you?'" মডেল যদি আগে অনুবাদ নাও শিখে থাকে, তবুও এই নির্দেশনা পেয়ে অনুবাদ করার চেষ্টা করবে।

৩. চেইন-অফ-থট প্রম্পটিং (Chain-of-Thought Prompting):

এই কৌশলে জটিল কাজকে ছোট ছোট প্রশ্ন বা ধাপে ভাগ করা হয়। যেমন, আপনি এআইকে বললেন, "একটি শান্ত সমুদ্রতীরের দৃশ্য বর্ণনা করো।" এআই একটি বর্ণনা দিলে, আপনি পরের প্রম্পট দিতে পারেন, "এই দৃশ্য উপভোগ করছে এমন একটি চরিত্রের পরিচয় দাও।" এভাবে ধাপে ধাপে এগিয়ে গিয়ে গল্প বা বর্ণনা তৈরি করা যায়।

৪. জেনারেটেড নলেজ প্রম্পটিং (Generated Knowledge Prompting):

এই কৌশলে বাহ্যিক জ্ঞানের উৎস বা মডেল নিজেই তৈরি করা তথ্য ব্যবহার করে আউটপুটের মান বাড়ানো হয়। যেমন, কেউ যদি এআই চ্যাটবটকে জিজ্ঞাসা করে, "আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতার তত্ত্ব সম্পর্কে বলো", তাহলে চ্যাটবট উইকিপিডিয়া থেকে তথ্য নিয়ে বিস্তারিত উত্তর দিতে পারে।

৫. সেলফ কনসিস্টেন্সি প্রম্পটিং (Self Consistency Prompting):

এই কৌশলে এআই মডেলের উত্তরগুলোর মধ্যে সামঞ্জস্য এবং যৌক্তিক প্রবাহ বজায় রাখা হয়। এর ফলে এআই-এর উত্তরগুলো আরও সুসংগত এবং প্রাসঙ্গিক হয়। যেমন, একজন ব্যবহারকারী যখন চ্যাটবটের সাথে কথা বলেন, তখন চ্যাটবট আগের কথোপকথনের প্রসঙ্গ ধরে রেখে পরবর্তী উত্তরগুলো দেয়।

প্রম্পট ইঞ্জিনিয়ারিং-এর আরও গভীর বিশ্লেষণ

  • কনটেক্সট এনহান্সমেন্ট: মডেলের আউটপুট উন্নত করতে প্রম্পটে অতিরিক্ত প্রসঙ্গ যোগ করা। উদাহরণ: নির্দিষ্ট সময়কাল বা স্থানের তথ্য সংযুক্ত করা।

  • সেলফ-কনসিস্টেন্সি প্রম্পটিং: মডেলকে একই প্রশ্নের জন্য একাধিক উত্তর তৈরি করতে বলা এবং সর্বাধিক সাধারণ উত্তরের ভিত্তিতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া।

প্রম্পট ইঞ্জিনিয়ারিং-এ সাধারণ ত্রুটি এবং তা এড়ানোর উপায়

  • অস্পষ্ট বা দ্ব্যর্থক প্রম্পট ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকা।

  • প্রম্পট খুব দীর্ঘ বা খুব ছোট হলে কীভাবে আউটপুট প্রভাবিত হয় তা বিশ্লেষণ করা।

প্রম্পট অপ্টিমাইজেশন টুলস

  • টেস্টিং প্ল্যাটফর্ম: কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিভিন্ন মডেলের সাথে প্রম্পট পরীক্ষা করার জন্য বিশেষ সরঞ্জাম ব্যবহার। উদাহরণ: OpenAI Playground।

  • ডিবাগিং প্রম্পট: মডেলের আউটপুট বিশ্লেষণ করে ভুল শনাক্ত করা এবং প্রম্পট সংশোধন করা।

বিভিন্ন ধরনের জেনারেটিভ মডেল: একটি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি

  1. ডিফিউশন মডেল (Diffusion Models): ধীরে ধীরে একটি এলোমেলো ডেটা থেকে বাস্তবসম্মত ছবি তৈরি করা। উদাহরণ: DALL-E।

  2. অটোরিগ্রেসিভ মডেল: প্রতিটি শব্দ বা অক্ষর পূর্ববর্তী শব্দ বা অক্ষরের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা। উদাহরণ: GPT সিরিজ।

  3. এনার্জি-বেসড মডেল: জেনারেটিভ মডেলের একটি নতুন ধারা, যা ডেটার সম্ভাব্যতা মূল্যায়ন করে নতুন ডেটা তৈরি করে।

বিশেষায়িত জেনারেটিভ মডেলের ব্যবহার

  • রিসার্চ এবং ডেভেলপমেন্ট: কৃত্রিম ডেটা তৈরি, যা গবেষণায় সময় এবং খরচ সাশ্রয় করে।

  • সৃজনশীল ক্ষেত্র: নতুন ডিজাইন, গান এবং গল্প তৈরি।

আজকের আলোচনায়, আমরা প্রম্পট ইঞ্জিনিয়ারিং এর গুরুত্ব এবং বাস্তব প্রয়োগ সম্পর্কে জেনেছি। এছাড়াও, এআই মডেলের সাথে কার্যকর যোগাযোগের জন্য প্রম্পট ইঞ্জিনিয়ারিং এর মূলনীতিগুলো এবং চ্যাটজিপিটি ব্যবহার করে ব্লগ পোস্ট লেখার একটি উদাহরণ দেখেছি।

Last updated